শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

নামে স্পেশাল কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন, আসলে লোকাল ট্রেন

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচল করা কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি চট্টগ্রামে পৌঁছাতে দেরি হলেই যাত্রীদের তোপের মুখে পড়তে হয় রেলওয়ের কর্মকর্তাদের। গত দুই মাসে ট্রেনটি দেরিতে পৌঁছাকে কেন্দ্র করে একাধিকবার চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে বিক্ষোভ, ভাঙচুর এবং বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে আরও এক-দুই ঘণ্টা আগে ছাড়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে রেলওয়ে সদর দফতরে।

কেন দেরিতে পৌঁছায়

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টায়। এটি চট্টগ্রামে পৌঁছে রাত সাড়ে ১০টায়। ট্রেনটি চলছে অনেক বছরের পুরোনো ইঞ্জিন দিয়ে। যার কারণে মাঝেমধ্যে ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিলে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হয়। সম্প্রতি ওই ট্রেনের যাত্রীরা আরেক ট্রেন মিস করায় রেলওয়ের বুকিং সহকারীকে মারধর করেছেন।’

এসএম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটির অনেক যাত্রী ঢাকায় যাওয়ার জন্য তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের আগাম টিকিট কেটে রাখেন। তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে ছাড়ে রাত সাড়ে ১১টায়। এক্ষেত্রে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে দেরিতে চট্টগ্রামে পৌঁছে। তখন তূর্ণা নিশীথা ধরতে পারেন না যাত্রীরা। এমনও হয়েছে স্পেশাল ট্রেনের যাত্রীরা চট্টগ্রামে পৌঁছার পর যখন দেখতে পান তূর্ণা নিশীথা চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে তখন যাত্রীরা ভাঙচুর শুরু করে দেন। এসব কারণে স্পেশাল ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে দুই ঘণ্টা আগে ছাড়ার জন্য প্রস্তাব রেখেছি আমরা। অর্থাৎ ট্রেনটি এখন কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা ৭টায় ছাড়ে। আরও দুই ঘণ্টা এগিয়ে বিকাল ৫টায় ছাড়ার জন্য রেলওয়ের দফতরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।’

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চট্টগ্রাম স্টেশনের পরিদর্শক আমান উল্লাহ বলেন, ‘কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের যাত্রীরা বেশ কয়েকবার স্টেশনে পৌঁছে ট্রেন মিস করায় বিক্ষোভসহ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করেছেন। ট্রেনটি চট্টগ্রামে পৌঁছার পর যখন যাত্রীরা দেখতে পান তূর্ণা নিশীথা নির্দিষ্ট সময়ে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে গেছে, তখনই সমস্যাটা তৈরি হয়।’

কেন দেরিতে পৌঁছায় কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন এমন প্রশ্নের জবাবে আমান উল্লাহ বলেন, ‘মূলত ট্রেনটির ইঞ্জিন অনেক বছরের পুরোনো। এজন্য মাঝেমধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে দেরিতে চট্টগ্রামে পৌঁছায়। তূর্ণা নিশীথা ট্রেন যতবারই যাত্রীরা মিস করেছেন, ততবারই চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম স্টেশনের বুকিং সহকারী গিয়াস উদ্দিনও ওই ট্রেনের যাত্রীদের হামলার শিকার হয়েছেন। তাই এই ট্রেন দুই ঘণ্টা এগিয়ে আনলে এই সমস্যা কিছুটা কমে আসবে বলে মনে করছি।’

কর্মচারীদের মারধর

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত ২৭ অক্টোবর রাতে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন। সন্ধ্যা ৭টায় ছেড়ে আসা এই ট্রেন রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছার কথা। কিন্তু তা রাত ১২টা ১০ মিনিটে পৌঁছায়। এই ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন। কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন দেরিতে পৌঁছায় অন্তত ৪০ জন যাত্রী তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেন পাননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী গিয়াস উদ্দিনকে মারধর করেন ট্রেন মিস করা যাত্রীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার-২ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই দিন ট্রেন মিস করা যাত্রীরা হইচই শুরু করেন। টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। কিন্তু ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও মানবিক অবস্থা বিবেচনা করে কক্সবাজারের স্পেশাল ট্রেনের যাত্রীরা তূর্ণা নিশীথা মিস করলেও তাদের পর্যটক এক্সপ্রেস করে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এরপরও ৩০-৩৫ জন তরুণ বুকিং সহকারীকে মারধর করেন। আবার ওই যাত্রীরা ঠিকই পর্যটক এক্সপ্রেস করে গন্তব্যে রওনা দেন। এর মধ্যে অহেতুক রেলকর্মীকে মারধর করেছেন যাত্রীরা।’

এটি স্পেশাল ট্রেন হলেও বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করে জানিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি এক ধরনের লোকাল ট্রেন। ষোলশহর, জানআলীহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থামে এবং যাত্রী ওঠানামা করেন। বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রাবিরতি এবং ইঞ্জিনে ত্রুটির কারণে অনেক সময় ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে দেরি হয়। দেরি হলেই যাত্রীদের কন্ট্রোল করা যায় না। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এজন্য ট্রেনটি দুই ঘণ্টা আগে কক্সবাজার থেকে ছাড়ার সুপারিশ করা হয়েছে।’

কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানালেন চট্টগ্রাম রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ট্রেনটি চলছে অনেক পুরোনো ইঞ্জিন দিয়ে। ইঞ্জিন সংকটের কারণে পুরোনো ইঞ্জিন দিয়ে চালু রাখা হয়েছে। ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিলে সচল না হওয়া পর্যন্ত যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়। তাই আমরাও চাচ্ছি ট্রেনটির ছাড়ার সময় আরও দুই ঘণ্টা এগিয়ে আনতে। ইতিমধ্যে রেলওয়ের সদর দফতরে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’

রামুর বাসিন্দা মো. শোয়েব আলী বলেন, ‘স্পেশাল ট্রেনটি থাকার কারণে রামু থেকেও কক্সবাজার তথা চট্টগ্রামে যাতায়াত করা যায়। তবে ইঞ্জিন অনেক পুরোনো। বিভিন্ন সময়ে ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়। এটি লাভজনক ট্রেন। এ কারণে ভালো ইঞ্জিন যুক্ত করার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’ সূত্র:বাংলাট্রিবিউন।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION